স্বদেশ ডেস্ক:
বাংলা সিনেমায় এখন নেতৃত্বের অভাব! যে যার অবস্থান থেকে ক্ষমতার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন! এমন কথাই সিনেমা পাড়ার এখন অনেকের মুখে মুখে। আর প্রযোজক, নির্মাতা, শিল্পীসহ কলাকুশলীরা যেন নিজেদের মধ্যেই ঝগড়ায় ব্যস্ত। আবার অনেকেই বলছেন, এটা ঝগড়া নয়, তাদের সিনেমার প্রচারণা! সম্প্রতি চলচ্চিত্র পাড়ায় ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার দিকে নজর দিলেই তা অনেকটা স্পষ্ট, তারা মিডিয়াকে বিক্রি করে আলোচনায় আসছেন। আর সেটি হচ্ছে সিনেমার মুক্তি বা মুক্তির পরপরই। মোট কথায় বলা যায়, নেতিবাচক মন্তব্য দিয়েই কি তারা সিনেমার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন?
খুব বেশি পেছনে যাওয়ার দরকার নেই। চলতি বছর জুনে মুক্তি পায় সৈকত নাসিরের সিনেমা ‘তালাশ’। মুক্তির আগে সিনেমার প্রচারণা হিসেবে তারা বেছে নেয় ‘মারামারি’। একটি টকশোর আয়োজনে উপস্থাপকের সঙ্গে মারামারিতে জড়িয়ে খবরের শিরোনাম হয় চিত্রনায়ক আদর আজাদ, নায়িকা শবনম বুবলী ও নির্মাতা সৈকত নাসির। পরে প্রকাশ্যে আসে, এটি তাদের সিনেমার প্রচারণার একটি অংশ।
ঢাকাই সিনেমার অনেক গুণী নির্মাতা ও অভিনেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এটি আসলে নোংরা একটি মন-মানসিকতা। আর এ ধরনের প্রচারণার কারণে শিল্পীদেরই মান-সম্মান ক্ষুণ্ন হচ্ছে। আর এর সঙ্গে জড়িত থাকা গণমাধ্যম কর্মীরা বিষয়গুলো নিয়ে লেখালেখির কারণে, তাদের (চলচ্চিত্র অঙ্গনের মানুষজন) এ ধরনের মন মানসিকতা থামছে না। সবশেষ ‘আশীর্বাদ’ সিনেমা নিয়ে প্রযোজক জেনিফার ফেরদৌস, নির্মাতা মোস্তাফিজুর রহমান মানিক, নায়ক রোশান আর নায়িকা মাহিয়া মাহি’র দ্বন্দ্ব যেন তারই প্রমাণ।
সিনেমা মুক্তির আগ মূহুর্তে তাদের এমন দ্বন্দ্বের কারণে প্রকাশ্যে আসে অনেক অশ্লীল কথাবার্তা। যা শোবিজ অঙ্গনের শিল্পীদের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। আবার গত বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে মিলে যাওয়া পর তারা সাংবাদিকদের জানায়, রাগের মাথায় অনেক বাজে কথা বলেছেন তারা, যা সত্যি নয়। এমন কি সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ায় খেপে যান উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীরাও। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কিছু কথার উত্তর দেন আয়োজকরা।
বিষয়টি নিয়ে পরিচালক সমিতির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান দৈনিক আমাদের সময় অনলাইনকে বলেন, ‘আসলে “আশীর্বাদ” সিনেমার পুরো ঘটনাই একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। এর ফলে আমাদের ওপর দেশের মানুষের একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এমন ঘটনা যাতে সামনে না ঘটে, সে বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকবে হবে।’
শুধু ‘আশীর্বাদ’ সিনেমার বেলায় না, এমন ঘটনা কিন্তু সম্প্রতি সময়ে অনেক হয়েছে। এটি কি সিনেমার প্রচারণা? উত্তরে এই নেতা বলেন, ‘আসলে সিনেমায় কাজ করার পর দেনা-পাওয়া নিয়ে প্রযোজক, নির্মাতা ও শিল্পীদের মধ্যে একটু দ্বন্দ্ব তৈরি হতেই পারে। এটা ভুল বুঝাবুঝির কারণে হয়। যা মুক্তির আগে প্রকাশ্যে আসে। তখন বিষয়টি গণমাধ্যমেও চলে আসে।’
আপনি বলছেন, সিনেমা মুক্তির আগে বিষয়গুলো প্রকাশ্যে আসে। সিমেনা ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে তো অনেকগুলো সমিতি আছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে কি নিজেরা বসে আপস করা যায় না? জানতে চাইলে সোহান বলেন, ‘হ্যাঁ, এগুলো নিজেদের মধ্যেই বসে ঠিক করা উচিত। এমন ঘটনার কারণে আমাদের মান-সম্মানই নষ্ট হচ্ছে। আমরা সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছি, কারও কিছু হলে হঠাৎ করেই সংবাদ সম্মেলন করবে; তা যেন না হয়। আগে আমাদের (চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর) সঙ্গে বসে বিষয়টি আলোচনা করতে হবে। এরপর সংবাদ সম্মেলন।’
তিনি আরও বলেন, ‘সিনেমার প্রচারণায় যেসব নোংরামি হচ্ছে আমি এগুলোর পক্ষে না। আমি চাই সুন্দরভাবে সিনেমার প্রচারণা হোক, যাতে করে দেশের মানুষের কাছে শিল্পীদের মান-সম্মান, সিনেমা দেখার আগ্রহ বেড়ে যায়।’
বরেণ্য নির্মাতা মুশফিকুর রহমান গুলজার মনে করেন, ‘এ ধরনের প্রচারণা এখনই বন্ধ করা উচিত। ভালো কাজের প্রচারণা দেশের মানুষের কাছে শিল্পীদের মান বাড়িয়ে তোলে। কখনই নেগেটিভ প্রচার ভালো হয় না। সম্প্রতি সময়ে ঘটে যাওয়া ঘটনা আমাদের মোটেও কাম্য নায়। এ ধরনের ঘটনা যাতে আগামীতে না ঘটে, সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।’
নির্মাতা অনন্য মামুন বলেন, ‘আসলে সম্প্রতি সময়ের মিডিয়ার কাজ নিয়ে আমি নিজেই বিরক্ত। আর সে কারণে মাসখানে ধরে আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করা বন্ধ করে দিয়েছি। আরেকটা কথা, ভালো কথা বা কাজের চেয়ে কিন্তু খারাপ কাজ ও মন্তব্য দ্রুত গতিতে ছড়ায়। তাই আমাদের সংযমী হতে হবে। আর আপনার যারা লিখনির মাধ্যমে আমাদের কথা তুলে ধরেন, সেখানেও একটু খেয়াল রাখতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, এফডিসিতে এতগুলো সমিতির কোনো দরকার নেই। যত সমিতি হবে তত মতবিরোধ হবে, তত আলোচনা-সমালোচনা হবে। নেতৃত্ব একটা হলে সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হয়। আরেকটা বিষয়, সবাই চাইবে নিজেদের অবস্থান থেকে মিডিয়াকে ব্যবহার করতে। আপনারা সেই সুযোগটা না দিলেই তারা দমে যাবে।’
দিনশেষে মিডিয়াকে ব্যবহার করা হচ্ছে- এমন কথায় সঙ্গে একমত পোষণ করে গুণী নির্মাতা ও অভিনেতা কাজী হায়াৎ বলেন, ‘এখন প্রতিটি ছবি প্রকাশে আগে একটা দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। এটা কি ইচ্ছে করে, না কি প্রচারের জন্য- সেটা তারাই জানে। আর ছবি মুক্তির আগে দেনা-পাওনার একটা হিসেব থাকে। সেটা চাইলে নিজেরা ঠিক করে নেওয়া যায়। আর মিডিয়াও এখন এত সহজ হয়ে গেছে, যে কারণে তারা ঢাল হিসেবে এটাকে ব্যবহার করে। এ ধরনের কাজ থেকে অবশ্যই সবাইকে বিরত থাকা উচিত।’